কোন ৬টি অভ্যাস আপনাকে গরিব বানাবে?
আপনি যদি পার্সোনাল ফাইনান্স এর উপরে সেরা কনটেন্টের খোঁজে থাকেন তাহলে আজকের পোস্টটি হবে আপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট।
শুরুতেই একটি কথা বলে রাখছি, এটি কোন সাধারণ কোন পোস্ট নয়। এই পোস্টের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারবেন। আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে মানুষের জীবনের এমন কিছু খারাপ অভ্যাসগুলোকে দেখব, যা মানুষজন প্রতিনিয়ত তাদের জীবনে ব্যবহার করছে এবং তারা অর্থনৈতিক মুক্তি থেকে আর বের হতে পারছে না।
আপনার ভিতরে ফাইন্যান্সিয়াল দক্ষতা যদি না থাকে তাহলেই শুধুমাত্র আপনি গরিব হবেন না, আপনার খারাপ অভ্যাস ও দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে গরিব বানাতে পারে। তাই, চলুন দেখে নেয়া যাক সেই ৬টি অভ্যাসগুলো আসলে কি কি?
(১) যদি আপনি নিজেকে সবসময় অন্য কারো সাথে তুলনা করেন
যদি নিজেকে হতাশা থেকে একেবারে মুক্তি দিতে চান তাহলে অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা বাদ দিয়ে দিন। আপনার কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন রয়েছে কিন্তু অন্যের কাছে আইফোন রয়েছে, যখনই আপনি আইফোনের সাথে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের তুলনা করবেন তখনই আপনার খারাপ লাগা শুরু হয়ে যাবে।
সেই রকম আপনার কাছে যে দক্ষতা রয়েছে সে দক্ষতা দিয়ে আপনি আপনার পরিমণ্ডলে অনেক ভালো কিছুই করতে পারবেন। আমি অনেক মেয়েদেরকে দেখেছি যারা রান্নায় অনেক ভালো, কিন্তু রান্না দিয়ে কত ভালো কাজের ক্ষেত্র তৈরি করা যায় সেটা তারা জানে না। তারা সবসময় তুলনায় ব্যস্ত এবং অন্যের ভালোটা দেখতে ব্যস্ত।
(২) যদি আপনি আপনার নিজের ওপর বিনিয়োগ না করেন
এবার আসি বর্তমান সময়ের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটা হচ্ছে নিজেকে সময় না দেয়া, ইংরেজিতে একটি কথা আছে “ Your learning will make your earning twice”, অর্থাৎ আপনার ট্রেনিং আপনার ইনকামকে দ্বিগুণ করবে।
সফল এবং অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পেয়েছে এমন মানুষ, তারা সবসময় অবস্তুগত বিষয়, যেমন অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞান সংগ্রহ করার জন্য বিনিয়োগ করে।
আর যারা সফল হতে পারছে না তারা সবসময় লাইফ স্টাইল এবং বস্তুগত জিনিসের উপরে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে। যেমন: জামা, কাপড়, মোবাইল, জুয়েলারি, গ্যাজেট ইত্যাদি।
এরকম বস্তুগত জিনিস আপনাকে কিছুই দিবে না সাময়িক কয়েকদিনের শান্তি দিবে। নিয়মিত অর্থ আসে এমন জায়গাগুলো আপনাকে সারা জীবন শান্তিতে রাখবে তাই ফাইন্যান্সিয়াল দক্ষতা তৈরীর উপরে বিনিয়োগ করা শুরু করুন।
(৩) যদি আপনি বেশি আবেগের কারণে কেনাকাটা করে থাকেন
আবেগ থাকা ভালো কিন্তু সেই আবেগটিকে যদি আপনি কেনাকাটার কাজে ব্যবহার করেন তাহলে আপনাকে সবসময় ঠকে যেতেই হবে।
বর্তমান ই-কমার্স এবং লাইফস্টাইল কোম্পানির প্রোডাক্টগুলো তাদের মার্কেটিং এ এতটাই আবেগ ব্যবহার করে যার কারণে আমরা সাধারণ মানুষগুলো সেখানে ফাঁদে পড়ে যাই। জ্ঞানী গুণী মানুষরা একটি কথা প্রায়ই বলে থাকে তাহলো “ বাসায় যখন থাকবেন তখন আবেগ ব্যবহার করুন, আর বাহিরে যখন থাকবেন তখন যুক্তি ব্যবহার করুন”.
আমার কাছে এই কথাটি ভালো লাগে, কারণ বাসার মানুষরা হচ্ছে পরিবারের মানুষ তাদের সাথে আবেগ ও ভালোবাসা বিনিময় করতে হয়। আর বাইরের জগত আপনাকে সবসময় অযৌক্তিক এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে প্রয়োজনীয় মনে করিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা করবে।
(৪) যদি আপনি কোনো কিছুর প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে থাকেন
এমন একটি অভ্যাস, বা এমন একটি কাজ, যেটার প্রতি আপনি অতিরিক্ত আসক্ত এবং যেখান থেকে আপনার ইতিবাচক এবং প্রবৃদ্ধি হয় এমন ফলাফল আসছে না। সেই সমস্ত আসক্তির জায়গা থেকে বের হয়ে আসার উচিত।
সোশ্যাল মিডিয়াকে এমনভাবে রূপদান করা হয়েছে যে মানুষ এখান থেকে সহজেই বের হয়ে আসতে পারে না। এই সমস্ত প্লাটফর্ম গুলোতে মানুষ দশ মিনিটের রিলসকে ৪ ঘন্টায় পরিণত করছে।
(৫) যদি আপনি মাত্রাতিরিক্ত বাহিরের খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে থাকেন
অতিরিক্ত বাইরের খাবার ক্রমাগতভাবে আপনাকে একটি বাজে অভ্যাস এবং লাইফস্টাইল তৈরি করার জন্য সাহায্য করবে।
অতিরিক্ত বাইরের খাবার কে নিয়ন্ত্রণ করুন, এই অতিরিক্ত বাহিরের খাবার আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি গরিব বানিয়ে দিতে পারে।
(৬) যদি আপনি প্রয়োজনের থেকে অভাবকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন
বিশ্বের ধনী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন বিনিয়োগকারী ওয়ারেন্ বাফেট, তার একটি উক্তি আমার খুব পছন্দ তা হল “ আপনার অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা, একদিন আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসকে বিক্রি করাবে”। অর্থাৎ আপনি যদি অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই থাকেন, তাহলে এমন একটি সময় আসবে যখন আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসকে বিক্রি করে চলতে হবে।
আপনার একটি স্মার্টফোন দরকার এটি হলো আপনার প্রয়োজন, কিন্তু আপনার ৯০ হাজার টাকা দামের আইফোন দরকার এটি হচ্ছে আপনার অভাব।
সর্বশেষ, আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ খুব বেশি না শুধুমাত্র এই ছয়টি নিয়ম সবসময় মেনে চলুন, আপনার জীবনের সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য অনেক বেশি কার্যকর হবে।
গরিব শুধুমাত্র আপনি টাকা পয়সার দিক থেকেই হবেন না, মনমানসিকতার দিক থেকেও হয়ে যাবেন, যদি এই ৬টি অভ্যাস আপনার মধ্যে থেকে থাকে।
পোস্টটি একটি জীবন পরিবর্তনকারী পোষ্ট, তাই শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে রেখে দিন এবং বন্ধু-বান্ধবদের জানিয়ে দিন।
ধন্যবাদান্তে
রাশেদুল ইসলাম, ফাউন্ডার, স্কিলস রাইডার