পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং কিভাবে করব?
নিজেকে কিভাবে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করাতে হয়? অথবা নিজের প্রভাব কিভাবে বিস্তার করতে হয় তা যদি আপনি জানতে চান তাহলে আজকের পোষ্টটি হবে আপনার জন্য একটি কার্যকর পোস্ট।
শুধুমাত্র ৪টি ধাপের মাধ্যমে আপনি দেখতে পারবেন যে কিভাবে ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে হয়? পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করার আগে এর কিছু সুবিধা নিয়ে আলোচনা করি এবং তারপর দেখিয়ে দিচ্ছি কিভাবে আপনি আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে পারবেন?
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর সুবিধা কি কি?
১. নেটওয়ার্কিং তৈরি করা যায়:
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের সব থেকে বড় সুবিধা হল আপনি সহজেই আপনার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারবেন। যারা মহান এবং ক্ষমতাবান নেতা তারা কিন্তু নেটওয়ার্ক তৈরি করে এবং তারা বিশ্বাস করে যে নেটওয়ার্ক হচ্ছে অর্থের থেকেও শক্তিশালী।
২. ব্যবসায়িক সমৃদ্ধি তৈরি করা যায়:
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী অথবা ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন, পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং শক্তিশালী মার্কেটিং টুলস হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার সম্ভাব্য কাস্টমারকে আপনার দক্ষতা, পার্সোনালিটি, মেধা এবং অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করার জন্য সাহায্য করে।
৩. প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা করে:
আপনি ব্যবসা করুন অথবা চাকরি করুন সব ক্ষেত্রেই আপনার প্রতিযোগী রয়েছে। নিজের পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং যখন তৈরি করতে পারবেন আপনার ভিতরে প্রভাব বিস্তার করার একটা ক্ষমতা তৈরি হবে এবং সেই ক্ষমতা আপনাকে সবার থেকে আলাদা করবে।
৪. বিশ্বাসযোগ্যতা এবং বিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে:
মানুষ আপনার সাথে তখনই সংযোগ স্থাপন করতে পারবে যখন আপনার উপরে বিশ্বাস তৈরি হবে। আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কারণে মানুষ আপনার উপরে বিশ্বাস করবে এতে আপনার একটি অথরিটি তৈরি হবে।
কিভাবে নিজেকে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে হয়?
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের জীবন্ত উদাহরণ হচ্ছে ইলন মাস্ক । বড় একটি ধামাকা তৈরি করেছিল স্পেস এক্স কোম্পানির হয়ে যখন পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট চালু করেছিল তারপর থেকে এই ব্যক্তিটিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
যেকোনো ইনোভেশন এবং যেকোনো কোম্পানির জন্য তার প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং হয়েছিল সবথেকে সফল ।
এই ভদ্রলোকের কতটা ক্ষমতা তা আরেকটি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়ে দিই, ইলন মাস্ক শেয়ার বাজার সংক্রান্ত টুইট করার আগে শেয়ারবাজারের কর্তৃপক্ষের পারমিশন নিয়ে টুইট করতে হয়, কারণ তার টুইটের কারণে অনেক কোম্পানির শেয়ার ওঠানামা করে এমনকি ভরাডুবি হয়ে থাকে।
৪টি ধাপের মাধ্যমে তৈরি করুন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ড
▶️ ব্যক্তিগত ক্ষমতা তৈরি করুন:
ক্ষমতা দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হচ্ছে ব্যক্তিগত ক্ষমতা আরেকটি হচ্ছে অবস্থানগত ক্ষমতা।
অবস্থানগত ক্ষমতার ব্যবহার করা যাবে না, ব্যক্তিগত ক্ষমতা তৈরি করে তার ব্যবহার করতে হবে। যেমন: অমিতাভ বচ্চনের রয়েছে ব্যক্তিগত ক্ষমতা আর তার সন্তান অভিষেক বচ্চনের কাছে রয়েছে অবস্থানগত ক্ষমতা।
আপনাকে অবশ্যই ব্যক্তিগত দক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, আপনার বাবা বা আত্মীয়স্বজনের ক্ষমতার উপর ভর দিয়ে চলা যাবে না। যারা ব্যক্তিগত ক্ষমতা ব্যবহার করে তারাই সবথেকে তাড়াতাড়ি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে পারে।
নিজের ভিতরে একটি প্রতিজ্ঞা তৈরি করুন এবং প্রতি মাসে অন্তত দুটি দক্ষতা শেখার চেষ্টা করুন, হতে পারে টেকনিক্যাল দক্ষতা, বিজনেস দক্ষতা অথবা সফট স্কিল।
▶️ প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করুন দাপট নয়:
প্রভাব বিস্তার করা এবং দাপট বিস্তার করা এ দুয়ের মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে। দাপট বিস্তার করে আপনি কিছুদিনের জন্য নিজের ব্র্যান্ডিং করতে পারেন কিন্তু একটি সময় আপনার অনুসারীরা আপনার কাছ থেকে চলে যাবে। কিন্তু যখন আপনি প্রভাব বিস্তার করা শিখবেন আপনার সাথে লাখো কোটি মানুষ জড়িয়ে যাবে।
আপনার নিজের সবথেকে কাছের মানুষ জনের কথা চিন্তা করুন যারা আপনার সাথে আজকে রয়েছেন, আপনি কিন্তু তাদেরকে প্রভাবিত করতে পেরেছেন বলে তারা আপনার সাথে রয়েছে।
▶️ সফট স্কিল তৈরি করে ব্যবহার করুন:
পিপলস স্কিল এমন কিছু দক্ষতা যা আপনাকে শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রে সফল করবে না, আপনার জীবনের সর্বক্ষেত্রে আপনাকে সফল করবে। সময়ের সাথে সাথে এই দক্ষতাগুলিকে শিখতে হবে, শুধুমাত্র দুটো দক্ষতা শিখুন (এক) সময় ব্যবস্থাপনা এবং (দুই) উপস্থাপন করার দক্ষতা, এবার এগুলোকে ব্যবহার করে দেখুন কি রকম পরিবর্তন আপনার ভিতরে আসছে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন।
▶️ মহান উদ্দেশ্য তৈরি করুন:
সর্বশেষ যে বিষয়টি নিয়ে আপনাকে সব থেকে বেশি অবগত হবে তা হল একটি মহান এবং সাধারণ উদ্দেশ্য ছাড়া আপনি কোনদিনও আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে পারবেন না।
উদাহরণঃ মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর, নেলসন ম্যান্ডেলা, অ্যাডলফ হিটলার, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, স্যার সলিমুল্লাহ ইত্যাদি।
কিভাবে দক্ষতা শিখে নিজেকে একজন সেরা পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে হয়? তার জন্য আমাদের স্কিলস রাইডার প্ল্যাটফর্ম আপনার জন্য একটি বিশাল সুযোগ নিয়ে এসেছে, এটি একটি লাইফ টাইম মেম্বারশিপ অফার যেখানে আপনি সারা জীবনের জন্য আমাদের সকল ধরনের কনটেন্টের প্রবেশাধিকার পেয়ে যাবেন।
আমি যুক্ত হতে চাই এখানে ক্লিক করলে আপনি অফারটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এখানে শুরুতেই একটি ভিডিও রয়েছে ভিডিওতে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কিভাবে অর্থ উপার্জন করা যায়?
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে আপনি, শুধুমাত্র অর্থ উপার্জন করতে পারবে না আপনি পাবেন সামাজিক মর্যাদা এবং ব্যক্তিগত প্রশান্তি। পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে কয়েক উপায়ে অর্থ উপার্জন করা যায় নিচে দেওয়া হলো কিছু;
👉 ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ এবং স্পনসরশিপ:
যখন আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে তখন অনেক ব্র্যান্ড বলতে গেলে শত শত ব্র্যান্ড আপনার সাথে পার্টনার এবং স্পন্সারশিপ করার জন্য আগ্রহী প্রকাশ করবে সেখান থেকে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
👉 পাবলিক স্পিকিং:
আপনি বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ পাবেন আপনার প্রাসঙ্গিক টপিকের উপরে আলোচনা করার জন্য। এই ধরনের ইভেন্ট থেকে আপনি রয়ালটি এবং নগদ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
👉 কনটেন্ট লাইসেন্সিং:
আপনি যদি হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন যেমন আর্টিকেল, বই, ভিডিও, ইনফোগ্রাফিক্স ইত্যাদি সেগুলোকে লাইসেন্স আউট করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
👉 অ্যাডভার্টাইজিং এবং মনিটাইজেশন:
সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার কনটেন্ট গুলোকে অ্যাডভার্টাইজিং এবং মনিটাইজেশন করার মাধ্যমে আপনি প্রতি মাসে আপনার অনুসারীর উপর ভিত্তি করে অসংখ্য অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
সর্বশেষ, একবার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে পারলে জীবনে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় না, পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের একটি শক্তিশালী বিষয় হলো আপনি এই জগতেও শান্তিতে থাকতে পারবেন পরের জগতেও অবশ্যই শান্তিতে থাকতে পারবেন।
পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করবেন, আমি বিশ্বাস করি জ্ঞান ভাগাভাগি করলে কমে না বরঞ্চ চক্রবৃদ্ধি আকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আপনার জন্য শুভকামনা, ধৈর্য ধরুন এবং নিয়মিতভাবে লেগে থাকুন আপনার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করার জন্য, আপনি সফল হবেন।
ধন্যবাদ 🙏
রাশেদুল ইসলাম, লীডারশীপ ট্রেইনার এবং বিজনেস কনসালটেন্ট