একজন ফ্রিল্যান্সারের ভবিষ্যৎ কি?
আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন অথবা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে জীবনে ক্যারিয়ার করতে চান তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য সবথেকে সেরা একটি পোস্ট হবে, কারণ এখানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের জীবন চক্রকে এত সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে যা আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করার জন্য সাহায্য করবে।
আমরা যেকোনো ব্যবসার বা যে কোন ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব চিন্তিত থাকি;
👉 প্রায় প্রায় শুনে থাকবেন যে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন অর্থাৎ এসইওর ভবিষ্যৎ কি?
👉 নতুন তো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চ্যাট জিপিটি চলে আসলো, তাহলে এখন কনটেন্ট রাইটারের ভবিষ্যৎ কি?
👉 ভিজুয়ালাইজেশন করতে পারে এমন অনেক আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চলে এসেছে তাহলে গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের ভবিষ্যৎ কি?
এসব কিছুর কথা চিন্তা করে আজকে আমরা এই পোস্টে দেখবো ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ কি?
একজন সফল ফ্রিল্যান্সারের ভবিষ্যৎ কি?
সবার প্রথম আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি ফ্রিল্যান্সিং কিন্তু মুক্ত পেশা এবং ব্যবসা। এখানে আপনাকে নিজেকেই সেবা তৈরি করতে হবে নিজেকেই কাস্টমারের কাছে সেবা বিক্রি করতে হবে এবং নিজেকেই টাকা পয়সার হিসাব রাখতে হবে।
যে কোন ব্যবসা প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে শুরু করতে হয়। সেখান থেকে সফল হওয়ার পরে সেই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেস টাকে স্টার্টআপ এ পরিণত করতে হয়। তারপরে সেই স্টার্টআপকে স্কেল আপ (মানে ব্যবসাকে অনেক বড় করে ফেলা) করতে হয়।
অর্থাৎ এখানে আপনাকে তিনটা ধাপ অনুসরণ করতে হবে -
Freelancing < Startup < Scale-up
সবার প্রথম যারা আপনারা ফ্রিল্যান্সিং করছেন সেটা হচ্ছে ব্যবসার একদম বীজ, সেখান থেকে সফল হওয়ার পর আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাকে একটি স্টাটআপের রূপান্তর করতে হবে, সেখানে সফলতা আসার পর সর্বশেষ সেই স্টাটআপ ব্যবসাটাকে একটি বৃহৎ ব্যবসায় রূপান্তর করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
আমাদের এই পোস্টটি পড়তে থাকুন আপনি শেষ পর্যন্ত গিয়ে খুব চমৎকার একটি ধারণা পেয়ে যাবেন। আপনার কাছে হয়তোবা এখন একটু জটিল লাগতে পারে, সর্বশেষ আপনি অসাধারণ একটি স্পষ্টতা পেয়ে যাবেন।
উপরে যে তিনটি ধাপের কথা দেখানো হলো অর্থাৎ Freelancing < Startup < Scale-up এগুলো হচ্ছে একটি মূল ভিত্তি আপনি এই মূল ভিত্তির বাহিরে যেতে পারবেন না। যদি এই নীতির বাহিরে যেতে চান তাহলে আপনি সেখানে সফল হতে পারবেন না অর্থাৎ আপনাকে ধাপে ধাপে আগাতে হবে ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে শুরু এবং সেখান থেকে তৈরি করতে হবে স্টার্টআপ তারপরে করতে হবে Scale-Up
এখন বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করে ঢেলে সাজানোর পালা তাই, আমি একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি;
ধরুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন এ অনেক দক্ষ এবং অনেক ভালোলাগা কাজ করে এই গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উপরে।
এখন আপনি এই গ্রাফিক্স ডিজাইন দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে ভাল ইনকাম করা শুরু করলেন। আপনার ইনকাম দিয়ে আপনার জীবন যাপন ভালোভাবে চলার পরও কিছু টাকা সেভিংস করতে পারছেন।
এখানে আপনি দু-তিনজন টিম মেম্বার দিয়ে আপনার ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসকে পরিচালনা করতে পারেন।
এই অবস্থা থাকা মুহূর্তে আপনি দেখছেন আপনার সার্ভিসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে যেখানে আপনি মাসে ৫০ থেকে ১০০টা কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করছেন কিন্তু আপনি দেখতে পারছেন যে আপনার কাস্টমার এর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এবং আপনার কাস্টমারকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য নতুন নতুন টিম মেম্বার এর সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।
যখন আপনি পূর্বের তুলনায় বেশি সংখ্যক কাস্টমারকে একবারে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবেন তখন আপনার ব্যবসাটাকে আর ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা বলা হবে না। তখন আপনাকে একটা কোম্পানির নামে নিবন্ধন করে ব্যবসাটাকে স্টার্টআপ এ পরিণত করতে হবে অর্থাৎ এখন আপনি আগের থেকে আরও ১০ থেকে ১৫ গুণ কাস্টমারকে সার্ভিস দিচ্ছেন এবং আপনার কোম্পানির ইনকাম এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ধরেন আপনি একটা ছোট কম্পানী দিয়ে বসলেন, শুরুতে যখন ফ্রিল্যান্সিং করতেন তখন আপনার ইনকাম থাকতো মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কিন্তু এখন আপনি যেহেতু একটা স্টার্টআপ তৈরি করেছেন তার মানে আপনি এখন মাসে কমপক্ষে হলেও ৫০০ থেকে ১০০০ জন মানুষকে সার্ভিস দিচ্ছেন বা তারও বেশি মানুষকে সার্ভিস দিচ্ছেন।
তাহলে এখন আপনার কোম্পানির ইনকাম মাসে হবে ৭ থেকে ২০ লাখ টাকা এভাবে আপনি এই স্টার্টআপে সফল করে আস্তে আস্তে কাস্টমার এর চাহিদা অনুযায়ী আপনি কোম্পানিকে বড় করে যাচ্ছেন এবং নতুন নতুন মার্কেটে সুযোগ খুঁজছেন সেখানে প্রবেশ করার জন্য।
ধরেন প্রথমে আপনি লোগো ডিজাইন করতেন এবং লোগো ডিজাইন এর উপরে ফ্রিল্যান্সিং থেকে সফল হওয়ার পরে স্টার্টআপ এ পরিণত হয়েছিলেন কিন্তু এখন আপনি যখন আপনার ব্যবসাকে scaleup করবেন তখন আপনি লোগো design মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবেন না, তখন আপনি টেম্পলেট ডিজাইন করবেন অর্থাৎ এটা একটা নতুন মার্কেট, আপনি কার্টুন ক্যারেক্টার ডিজাইন করবেন এটা একটা নতুন মার্কেট, আপনি আইকন ডিজাইন করবেন এটা একটা নতুন মার্কেট এবং গ্রাফিক্স রিলেটেড বিভিন্ন ধরনের সফটওয়ার এবং টুলস তৈরি করে বিক্রি করা শুরু করবেন এগুলো হচ্ছে সব নতুন মার্কেট।
এভাবে আপনি আস্তে আস্তে একটার পর একটা নতুন নতুন মার্কেটে প্রবেশ করবেন এবং সেখানে আপনার ব্যবসাকে সম্প্রসারণ করতেই থাকবে।
অর্থাৎ আপনি আর আগের লোগো ডিজাইনের ব্যবসায় নাই, আপনি গ্রাফিক্স সম্পর্কিত আরো নানান ধরনের নতুন মার্কেটে প্রবেশ করছেন অর্থাৎ শুরুতে আপনার ছিল দুই থেকে তিনজন টিম মেম্বার এর একটি ব্যবসা আর এখন কয়েকশো টিম মেম্বার কাজ করছে এবং আপনি নিজ অঞ্চলের সার্ভিস দেওয়ার পরেও বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সার্ভিস দিচ্ছেন।
আর এভাবেই আপনি প্রথম দুটো ধাপ অর্থাৎ ফ্রিল্যান্সিং এবং স্টার্টআপ থেকে আপনার বিজনেস কে scaleup এ পরিণত করে ফেলবেন।
উদাহরণ হিসেবে জনপ্রিয় গ্রাফিক্স ডিজাইন টুলস কোম্পানি CANVA তারা আজকে পুরা পৃথিবীতে তাদের বিজনেস সম্প্রসারণ করতে পেরেছে, যাদের মান্থলি ইনকাম বাংলাদেশি টাকায় ২০০ কোটি টাকার উপরে।
এবং যাদের মার্কেটে ১০ লাখের উপরে মান্থলি একটিভ কাস্টমার রয়েছে এবং তারা এখান থেকে রেকারিং রেভিনিউ মডেল জেনারেট করতে পারছে অর্থাৎ এমন একটি ইনকামের রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে যা তাদেরকে নিয়মিতভাবে আয় রোজগারের আয়োজন করে দিচ্ছে।
এতকিছু আপনি তখনই সম্ভব করতে পারবেন যখন আপনার টেকনিক্যাল স্কিল এর সাথে সাথে বিজনেস স্কিল এর উপরে বেশি করে মনোনিবেশ করতে হবে।
আপনি যদি শুধুমাত্র টেকনিক্যাল স্কিল নিয়ে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে প্রথম ধাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। জীবনে বেশি দুর এগোতে পারবেন না মানে ওই ফ্রিল্যান্সিং বিজনেসের গন্ডিতে কিন্তু আপনি যখনই বিজনেস স্কিল এবং পিপলস স্কিল তৈরি করা শুরু করবেন তখন আপনি আনলিমিটেড ইনকামের রাস্তা তৈরি করতে পারবেন।
একটা চিরন্তন সত্য কথা মনে রাখবেন সেটা হচ্ছে
“Clarity is Superpower”
আপনার যদি কোন বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকে তাহলে আপনি সেই বিষয়ে উন্নতি করতে পারবেন না। যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় থেকে যাবেন।
অর্থাৎ আপনি যদি জানেন যে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপ এ যাওয়ার জন্য আমাকে কোন কোন বিষয়ের উপরে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে তাহলে আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না আপনার সমৃদ্ধি হবে নিশ্চিত।
এই পোস্টে আমি শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছি এভাবে প্রত্যেকটা বিষয়ের উপরে আপনি ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করে সেখান থেকে একটি বড় ব্যবসার রূপান্তর করতে পারবেন।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং, ভয়েস ওভার আর্টিস্ট, মিউজিক, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, অ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, পাবলিক স্পিকিং, রাইটিং সহ যত পেশায় ফ্রিল্যান্সিং করেন না কেন সবকিছুকেই আপনি ভবিষ্যতে বড় একটি ব্যবসায় রূপান্তর করতে পারবেন।
এটা শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে যখন আপনার বিজনেস স্কিল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি হবে, যা আমি এই পোস্টে আগেও একবার উল্লেখ করেছি।
বিজনেস স্কিলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
👉 কিভাবে আইডিয়াকে ব্যবসায় রূপান্তর করতে হয়?
👉 কিভাবে নতুন নতুন কাস্টমার খুজে পেতে হয়?
👉 কিভাবে সহজে অর্থ সংগ্রহ করতে হয়?
👉 কিভাবে কোম্পানিকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করতে হয়?
👉 কিভাবে প্রথম ১০০০ কাস্টমার খুঁজে পেতে হয়?
👉 কিভাবে অল্প টাকায় মার্কেটিং করতে হয়?
👉 কিভাবে পণ্যের জন্য নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হয়?
👉 কিভাবে বিদ্যমান বাজারে রাজা হতে হয়?
👉 কিভাবে ভালো টিম তৈরি করতে হয়?
👉 ব্যবসায় কিভাবে টেকনোলজি সংযুক্ত করতে হয়? ইত্যাদি
এই প্রত্যেকটা বিষয়ের উপরে আমাদের স্কিলস রাইডার প্ল্যাটফর্মে আপনারা নিয়মিত, কনটেন্ট পেয়ে যাবেন। আমাদের এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই এই পোষ্টের নিচে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আত্ম উন্নয়ন সম্পর্কে যদি আপনাদের জানার আগ্রহ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন কোন বিষয়ের উপরে আপনারা জানতে চাচ্ছেন?
সর্বশেষ পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করে আপনার মূল্যবান মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না।
ধন্যবাদ
মোঃ রাশেদুল ইসলাম, লিডারশিপ ট্রেইনার এবং বিজনেস কনসালটেন্ট।